LIFE STYLE
১. প্রচুর পানি পান করুন : গরমকালে ঘাম বেশি হয় বলে শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়। তাই প্রচুর পানি পান করতে হয়। কিন্তু বর্ষাকালেও কেন বেশি পানি পান করতে হবে? উত্তরটা খুব সহজ। গরমকালের মতো বর্ষা মৌসুমেও শরীরে প্রচুর ঘাম হয়। কিন্তু এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় বাতাসে ভেজা ভাব থাকে। এতে শরীর থেকে ঘাম বেরিয়ে যায় না। কিন্তু শরীরে এক ধরনের ভেজা ভাব বজায় থাকে। তাই এ সময় সুস্থ থাকতে বেশি করে পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে খেতে পারেন শরবত, তাজা ফলের জুস, লেবুর
পানি। ঘরে কিংবা বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন সবসময় পানির বোতল সঙ্গে নিন। বাইরের খোলা পানি কখনও খাবেন না। এছাড়া অল্প গরম আদা-চা এ সময় বেশ কার্যকর। এটি শরীরের পানিশূন্যতা রোধে সাহায্য করে।
২. সুষম খাবার খান : বর্ষায় সুস্থ থাকার অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে সুষম বা ব্যালেন্স ডায়েট গ্রহণ করা । কেননা এ সময় শরীরের হজম ক্ষমতা বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই এ সময় খাবার-দাবারের ব্যাপারে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। টাটকা ও ফ্রেশ খাবার খেতে হবে। ক্ষুধা না লাগলে অসময়ে খাবেন না। খাবার জন্য অবশ্যই টাইম মেইনটেইন করুন। অসময় খেলে হজমে সমস্যা দেখা দেবে। আর তা থেকে আপনি আক্রান্ত হবেন নানা রোগ-বালাইয়ে। খাবার রান্নার সময় হলুদ, মরিচ, ধনিয়া গুঁড়ো ব্যবহার করুন। এসব মশলা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৩. পরিষ্কার এবং ফ্রেশ খাবার খান : এ সময় বাসি খাবার একদম খাওয়া ঠিক নয়। কেননা এমনিতেই বাসি খাবারে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়, তার ওপর বর্ষাকালে এর প্রভাব আরও বেড়ে যায়। অনেকে মনে করেন খাবার ফ্রিজে থাকলে ভালো থাকে। তবে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে সেই খাবারটা আদৌ ভালো থাকে কি-না তা খাবার আগে একবার ভেবে দেখুন। এ সময় মাছ-মাংসের চেয়ে বরং সবজি ও ফলমূল বেশি করে খান। আমাদের দেশে এ সময় বিভিন্ন জাতের প্রচুর দেশি ফল পাওয়া যায়। এ সময় ফল রোগ-বালাই থেকে আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে। খাবার আগে যে কোনো সবজি ভালো করে ধুয়ে তারপর রান্না করুন। চেষ্টা করুন প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিন রান্না করে খেতে। বাসি খাবার একদম এড়িয়ে চলুন।
৪. বাসার চারপাশ পরিষ্কার রাখুন : বর্ষাকালে মশা, তেলাপোকা, পিপড়া এসব পোকা-মাকড়ের উত্পাত অনেক বেড়ে যায়। শোয়ার ঘর থেকে শুরু করে বসার ঘর, বারান্দা ও রান্নাঘর পরিষ্কার রাখা জরুরি। অনেকে আবার গাছপালা পছন্দ করেন। তাই বারান্দায় রাখা গাছের টবগুলোর প্রতিও বাড়তি যত্ন নিতে হবে। খেয়াল করবেন টবে যেন পানি না জমে। এতে মশার বংশ বৃদ্ধি হবে। রান্নার পর তরকারির খোসা, মাছের কাঁটা এসব পলিথিনে মুড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলুন। তাহলে পিপড়ার উত্পাত থাকবে না। ঘর মোছার সময় এন্টিসেপকিট ব্যবহার করুন। আসলে পরিষ্কার থাকলে রোগ-বালাই কম আক্রমণ করবে। আর যাদের বাসায় ছোট শিশু আছে, তারা আরও বেশি সচেতন থাকতে হবে।
৫. রেস্তোরাঁর খাবার ‘না’ : রেস্তোরাঁর খাবারে সবসময় তেল মশলা একটু বেশি থাকে। এ সময় খাবার সাধারণত একনিতেই একটু দেরিতে হজম হয়। আর বর্ষাকালে হজম শক্তি কমে যায় বলে রেস্তোরাঁর খাবার এড়িয়ে চলা ভালো।শুধু রেস্তোরাঁর নয়, রাস্তার খাবার যেমন চটপটি, মুড়িমাখা, আখের শরবত, আইসক্রিম এসব মুখরোচক খাবার না খাওয়াই ভালো। এসব খাবার হাইজিনিক না হওয়ায় ব্যাকটেরিয়া দ্রুত শরীরে আক্রমণ করে আপনাকে অসুস্থ করে তুলবে। রাস্তায় কেটে রাখা ফল খাবেন না। এতে ফুড পয়জনিং হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৬. পায়ের যত্ন নিন : বর্ষাকালে ছোটখাটো নানা রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় পা। কেননা বৃষ্টির সময় শহরের অলিগলি ভরে যায় নোংরা পানিতে। এছাড়া বৃষ্টির পানিতেও অনেকের এলার্জি থাকে। তাই বৃষ্টির পানিতে পা ভিজালে পায়ে নানা রোগ ইনফেকশন হতে পারে। তাই বাসায় বা কর্মস্থলে যেখানেই যান না কেন ভালোভাবে পা ধুয়ে শুকনো করে মুছে নিন। সম্ভব হলে পায়ে লোশন লাগান। মেয়েদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সহজ হলেও বেশিরভাগ পুরুষের জন্য এটি কষ্টকর। কেননা তারা কসমেটিক বহন করতে চায় না। কিন্তু বর্ষার সময় আপনার রুটিনে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আনতে হবে সুস্থতার জন্য। সে ক্ষেত্রে সাবান, লোশন এসব অফিসে রাখতে পারেন। আর ছেলেরা জুতা-মোজা পরার কারণে পা ঘেমেও ভিজে ভাব চলে আসে। সে ক্ষেত্রে পা ধুয়ে মুছে শুকনো করে রাখুন। পা ভেজা থাকলে আঙ্গুল ও নখে ফাংগাল ইনফেকশন হতে পারে, যা পরে জটিল রোগের সৃষ্টি করবে। এছাড়া শুকনো মোজা, জুতা, রেইনকোট ব্যবহার করুন আর এসবের বাড়তি যত্ন নিন।
৭. হালকা ব্যায়াম করুন ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন : এ সময় শরীরকে ফিট রাখতে ঘরেই করুন হালকা ব্যায়াম। ফ্রিহ্যান্ড এক্সাসারসাইজ, আপনার মাসালকে রিলাক্স রাখবে। এছাড়া বাড়িতে ইয়োগাও করতে পারেন। এতে আপনি থাকবেন সতেজ ও তরতাজা। আরেকটি বিষয় হলো এ সময় একটু বেশি বিশ্রাম নিন। যারা কর্মজীবী তারা বাসায় ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তারপর কাজ শুরু করুন। যারা বাসায় থাকেন, তারাও সময় পেলে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিন। তবে ভাত খাবার পরই দিনের ঘুমকে এড়িয়ে চলুন। এটি আবার আপনাকে মুটিয়ে তুলবে।
৮. চোখের যত্ন নিন : বর্ষাকালে চোখওঠা, চোখ জ্বালাপোড়া, পানি পড়ার মতো অস্বস্তি ও বিরক্তির কিছু সাধারণ রোগে আমরা কম-বেশি সবাই আক্রান্ত হই। সে ক্ষেত্রে আপনাকে বাড়তি কিছু সাবধানতা অবলম্বল করতে হবে। যেমন— চোখে বা মুখে হাত দেয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে। নিজের তোয়ালে, চোখের ল্যান্স, রুমাল কার সঙ্গে শেয়ার করবেন না। চোখওঠা রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই চোখের মেকআপ থেকে দূরে থাকুন। চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়ে এ সময় চোখের এন্টিব্যাকটেরিয়া লোশন ব্যবহার করতে পারেন। এসব নিয়ম মেনে চলুন আর বর্ষায় চোখকে রাখুন সুস্থ।
৯. শিশু ও বয়স্কদের যত্ন নিন : বাড়িতে শিশু বা বয়স্ক মানুষ থাকলে তাদের প্রতি নিন বাড়তি যত্ন। শিশুুরা বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ভালোবাসে। বিশেষ করে স্কুল থেকে ভিজে বাসায় ফেরার মজাই অন্যরকম। ঠিক তাই। ভিজুক না যত খুশি, বাসায় ফিরে ভালো করে এন্টিসেপটিক সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে শুকনো কাপড় পরিয়ে দিন। দেখবেন শিশুরা সুস্থ থাকবে। এছাড়া এ সময় একদম বাইরের খাবার খেতে দেবেন না তা শিশু যতই বায়না করুক। এছাড়া বাড়িতে যদি বয়স্ক কেউ থাকেন, তাদের চলাফেরা ও খাবার-দাবারের প্রতি বাড়তি যত্ন নিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় বৃষ্টিতে চলাফেরা করতে গিয়ে তারা পড়ে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটান। তাই বৃষ্টির সময় তাদের বাইরে বের হতে না দেয়াই ভালো।
১০. মোজা-জুতার যত্নও চাই : শুধু ভালো খাওয়া আর শরীরের যত্ন নিলেই হবে না যত্ন নিতে হবে নিত্যব্যবহার্য পোশাকেরও। কেননা বাইরে পরার পোশাকের যত্ন আমরা সবসময়ই একটু বেশি নিই। কিন্তু ঘরে পরার কাপড়-জুতা এসবের প্রতি আমরা কমই যত্নবান হই। অনেক সময় দেখা যায় ভেজা কাপড় পরার কারণে শরীরে ফাংগাস ইনফেকশন ও ঘামাছির মতো অস্বস্তিকর রোগ দেখা দেয়। তাই এ সময় সুতির ঢিলেঢালা কাপড় পরুন। জর্জেট, রেয়ন এসব কাপড় এড়িয়ে চলুন। এছাড়া শুকনো জুতা-মোজা পরুন। কখনও জুতা ভিজে গেলে দ্রুত শুকিয়ে নিন। এতে পা সুস্থ ও সুন্দর থাকবে। আপনি সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবন উপভোগ করতে পারবেন।
0 comments:
Post a Comment